ফেসবুক কি আপনার মনের কথাও পড়ে ফেলে

১৫তম বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে চিকিৎসক সেঁজুতি কবীর স্বামীকে ঘড়ি উপহার দেওয়ার কথা ভাবছিলেন। ভাবতে ভাবতে ফেসবুকে ঢুকেই চমকে গেলেন। তাঁর সামনে বিভিন্ন ডিজাইনের সব ঘড়ির বিজ্ঞাপন আসতে শুরু করছে। সেঁজুতি কবির জানান, ‘ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। আমার স্বামী ঘড়ি পছন্দ করেন, তাই মাঝেমধ্যেই তাঁকে ঘড়ি উপহার দিই। ফেসবুক কীভাবে জানল সে সময় আমার ঘড়ি লাগবে!’
চিকিৎসক সেঁজুতি কবীরের মতো এমন অনেকেই চমকে যান। কারণ, এখন যা মনে আসে, তা যেন কীভাবে মুহূর্তেই ভেসে ওঠে ফেসবুকের পর্দায়।
কী রহস্য ফেসবুকে
এই ডিজিটাল যুগে অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী এমন অদ্ভুত বিষয়ের সাক্ষী। ব্যাপারটা এমন, যেন কোনো এক জাদুতে ফেসবুক জানে আমাদের মনে কী চলছে। প্রযুক্তিগত দিক থেকে বিষয়টির ব্যাখ্যা আছে, অর্থাৎ মোটেও জাদুবিদ্যা বা কাকতালীয় ব্যাপার নয়। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিশ্লেষক হাসান তানভীর মনসুর বলেন, ‘ফেসবুক আদতে তার ব্যবহারকারীদের অত্যাধুনিক ডেটা সংগ্রহের পদ্ধতি ব্যবহার করে, যা ব্যবহারকারীর পছন্দ ও আচরণকে অনেক নির্ভুলতার সঙ্গে ভবিষ্যদ্বাণী করতে দেয়।’
আপনার তথ্যই ফেসবুকের শক্তি
ফেসবুক শুধু তাঁর ব্যবহারকারীর আচরণ ও মিথস্ক্রিয়ার তথ্য সংগ্রহ করে না, অনেক বাইরের ওয়েবসাইট ও অ্যাপ থেকেও তথ্য সংগ্রহ করে। মেটা পিক্সেলের মতো বিভিন্ন টুল আছে, যা তৃতীয় পক্ষের সাইট থেকে ফেসবুক ব্যবহারকারীর কার্যকলাপ সম্পর্কে তথ্য দেয়। অর্থাৎ ফেসবুক আপনার সম্পর্কে ডেটা সংগ্রহ করে নানান পথে। সরাসরি কিছু তথ্য ফেসবুককে আপনি নিজেই দেন। যেমন বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও থেকে তথ্য নেয় ফেসবুক। এ ছাড়া আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, নাম, পড়াশোনা, পরিবারের সদস্য, পছন্দ-অপছন্দ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পোস্ট থেকে ফেসবুক ডেটা সংগ্রহ করে। আপনি যদি অনেক ক্রিকেটারের ছবিতে লাইক দেন, বিভিন্ন ছবি শেয়ার করেন, তাহলে আপনি ক্রিকেট বা খেলাধুলা–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখবেন।
প্রযুক্তিবিশ্লেষক শাহরিয়ার হাসান বলেন, ‘কোনো ছবি তুলে তা প্রকাশ করলে সেই ছবির সঙ্গে থাকা মেটা ডেটা, যেমন ক্যামেরা বা মুঠোফোনের তথ্য, স্থান-কাল, জিপিএসের তথ্য ফেসবুক পেয়ে যায়। ব্যবহারকারীর আইপি ঠিকানা, মুঠোফোনের অনেক তথ্য ফেসবুক তার অ্যাপের মাধ্যমে সংগ্রহ করে। ফেসবুক সার্ভার টু সার্ভার ট্র্যাকিং পদ্ধতিতেও বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করে। ব্যবহারকারী হয়তো কোনো মাধ্যমে শাড়িবিষয়ক খবর পড়ছেন কিংবা ঘড়ি নিয়ে কোনো ফিচার পড়েছেন বা ভিডিও দেখেছেন, সেই তথ্য ফেসবুক সংগ্রহ করে।’
ফেসবুক ‘পিক্সেল’ নামের একটি ফিচারের মাধ্যমে ৮ মিলিয়ন ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে বলে জানা যায়। এক গবেষণায় জানা যায়, ফেসবুক প্রায় ২ হাজার প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যবহারকারীর ডেটা সংগ্রহ করে। ডেটা শেয়ারিংয়ের এই বিস্তৃত নেটওয়ার্ক ফেসবুককে ব্যক্তির বিস্তারিত প্রোফাইল তৈরি করতে সুযোগ করে দেয়। এতে ফেসবুকের অ্যালগরিদমের নির্ভুলভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে তোলে। অনেক ওয়েবসাইট তার ব্যবহারকারীদের তথ্য নিজে সংগ্রহ করে ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার হাতে তুলে দেয় বলে জানা যায়। সেই তথ্য ফেসবুক সংগ্রহ করে ব্যবহারকারীর পছন্দ বা প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন ব্যবহারকারীদের সামনে দিতে থাকে।